মনের ভুল
রওজাতুল জান্নাত (তামান্না)
আমি তন্দ্রা। আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। আমার বোন শিথিল
ক্লাস নাইনে পড়ে। আমরা দুইবোন একই বিদ্যালয়ে প্রভাতি শাখায় পড়ি। আমাদের স্কুলের
নাম শেরে বাংলানগর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়। আমাদের স্কুলটা খুব সুন্দর এবং অনেক
বড়। আমাদের বিদ্যালয়ের চারদিকে চারটি বাথ রুম আছে। আমার ক্লাসের পাশেই আমাদের
স্কুলের লাইব্রেরী। এটা দোতলায়।
নীচ তলায় আমাদের স্কুলের ক্যান্টিন। তার পাশেই বড় একটি
ও ছোট একটি মানে দুটি রুম ছিল। রুম দুটোতে কখনো তালা দেয়া থাকেনা। কিন্তু তারপরও
এমন ভাবে লাগানো মনে হয় কেউ ভেতর থেকে খিল লাগিয়ে রেখেছে। অনেকের মুখে শুনি এখানে
নাকি ভূত টুত আছে। আবার অনেকের ধারনা আমাদের স্কুলের কোনায় যে তালগাছটি আছে সে
যায়গায় ভুত ওখানে থাকে। আবার কেউ কেউ বলে আমাদের হেড মাস্টার নাকি ভূত পালে। আবার
অনেকে নাকি দেখেছে কেউ কেউ এগুলোর ভয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেছে। আমি এগুলো বিশ্বাস
করতাম না।
তবে মনে একটু ভয় ছিল। আমাদের স্কুলের মেয়েরাও কখনো
বাধ্য না হলে ঐ রুম দুটোর সামনে দিয়ে হাটতোনা। আমিও কখনো ঐ দিকটাতে যাইনি। আর
যাওয়ার সময় পাইনি। তবে সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। আমাদের স্কুল বৃহস্পতিবার টিফিন
দেয়না। সেদিন আবার আমি নাস্তা করে যাইনি। তো ভাবলাম ক্যান্টিন থেকে টিফিন কিনে
নিয়ে আসি। তখন ক্ষুধায় আমি সেই ঘরদুটোর কথা ভুলেই গেলাম।
ছুটি হয়ে গেছে। তাই চারদিক নিঃশব্দ। আমার পায়ের আওয়াজ
ছাড়া কিছুই শোনা যায়না। আস্তে আস্তে ছোট আপার তার পর বড় আপার রুম তারপর ডাক্তার এর
রুম পার হয়ে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি ক্যান্টিন বন্ধ। হঠাৎ সেই রুম দুটির দিকে চোখ
পড়লো। দেখি দরজা দুটোর একটা দরজা পুরোপুরি খোলা। অন্যটি চাপানো। পাশাপাশি দুটি
রুম। আমি আস্তে আস্তে দরজা দুটির দিকে পা বাড়ালাম।
ডান দিকের দরজা পুরা পুরি খোলা ছিল। আমি একটু উকি দিতেই
দেখি ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমি সাহস করে আরেকটু এগোলাম। জানিনা হঠাৎ আমার এত সাহস কোথা
থেকে আসলো। ঐ ঘরটায় ঢুকতেই একটা বিড়াল লাফ দিয়ে আমার সামনে দিয়ে চলে গেল। তারপর
ভয়ে আমি কাপছিলাম।
আমার মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমাকে খেয়ে ফেলবে। তখন আবার
আমার সামনের দিকে চোখ পড়লো। শুনতে পেলাম কি যেন মচমচ করে শব্দ করছে। তারপর দেখলাম
আমার পায়ের কাছেই কি যেন নড়ছে। আমি ভয়ে চিৎকার দিয়ে ওখানেই ফিট হয়ে পড়ে ছিলাম।
জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি বাসায় আম্মু আমার জন্য হরলিক্স বানাচ্ছে। পাশের রুম থেকে
আপুর পড়ার শব্দ শুনতে পেলাম। আম্মুকে জিজ্ঞেস করলাম আম্মু আমার কি হয়েছিল। আম্মু
বললো কি হয়েছিল তা তুই ই ভাল করে জানিস।
সেদিন ছুটির পর প্রায় আধা ঘন্টা শিথিল তোকে খোজাখুজির
পর আমাকে ফোন করে জানালো তারপর আমি তোর স্কুলে যাই। তোর স্কুলের দারোয়ানকে
জিজ্ঞাসা করলাম সে তোকে বের হতে দেখেছে কিনা। সে বললা না দেখিনি। সে কথা শুনে
শিথিল বললো চল মা ভেতরে ভালমত খুজি। অনেকক্ষণ খোজার পর তোকে আমরা সেই রুমে পেয়েছি।
আমি নাকি প্রায় আটাশ ঘন্টা অজ্ঞান ছিলাম। তারপর আমি সেই ঘরে কি কি হয়েছিল তাই
আম্মুকে বললাম। আম্মু কিছুই বললেন না। হেসে চলে গেলেন।
No comments:
Post a Comment