Avðh© cv_i
সৈয়দ রিয়াজুল হক
সকালে ঘুম থেকে উঠে জাহিদ ওর পড়ার টেবিলে
একটা পাথর পেল । মোটামুটি এক বর্গ ইঞ্চির ছো্ট্ট একটা হলদেটে রঙের পাথর। নিশ্চই
মীরা কোন এক ফাঁকে ওর ঘরে ঢুকেছিল। জাহিদ দ্রুত দেখে নিল অ্যাসাইনমেন্টের
পেপারগুলো ঠিক আছে কিনা। নাহ সব ঠিকঠাকই আছে। সপ্তাহ খানেক আগে ও
থার্মোডিনামিক্সের যে নোটগুলো তৈরি করেছিল। গত পরশুদিন দেখে সেগুলোর ওপর আকিঁবুকি
কেটে নষ্ট করা হয়েছে। মীরাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করতেই বললো ছবি একেছি। জাহিদ হতাশ হয়ে
জিজ্ঞেস করলো এটা কিসের ছবি? মীরা বললো দেখছ না সাপ একেছি। সাপটা আমাদের বাড়ির
পিছনে যে সুপারী গাছটা দিয়ে পেচিয়ে পেচিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে। জাহিদ দীর্ঘ নিঃশ্বাস
ফেলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলো। যাই হোক আপাতত অ্যাসাইনমেন্ট পেপারগুলো ঠিক আছে ওটাই
যথেষ্ট। এখনই না বের হলে ক্লাসের দেরি হয়ে যাবে। জাহিদ দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে
খাবার টেবিলে বসল। মীরা চোখ বড় বড় করে ওর দিকে তাকাল। চোখ পাকিয়ে মিছিমিছি ওকে ভয়
দেখানোর চেষ্টা করছে। ছোটদের এক মজার খেলা। এইটা মনে হয় নতুন শিখেছে। জাহিদ টেবিলে
বসে দ্রুত খাওয়া শুরু করলো। ডিম আলুভাজি পরোটা। জাহিদ খেতে খেতেই পাথরটা মীরার
সামনে রাখল। বললো এটা তোমার ভুল করে আমার ঘরে ফেলে এসেছিলে। তোমাকে না নিষেধ
করেছিলাম আমি না থাকলে আমার ঘরে ঢুকবে না।
আমিতো তোমার ঘরে ঢুকি নাই।
ফের মিথ্যা কথা, তাহলে এটা টেবিলে আসলো
কোথা থেকে।
মীরা বলল এটা আমার না আমি রাখি নাই।
জাহিদ আর কিছু বলল না। খাওয়া শেষ করে ডাক
দিল মা....।
জাহিদের মা রান্না ঘর থেকেই উত্তর দিল কি
হলো।
মীরার দিকে খেয়াল রেখ ও আমার ঘরে ঢুকে
জিনিসপত্র উল্টাপাল্টা করে।
আচ্ছা রাখবো তুই বস চা দিই খেয়ে যা।
এখন আর সময় নেই আমি গেলাম বলে জাহিদ
ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ক্লাস শেষ করে
জাহিদ কিছুক্ষণ লেকের পাড়ে ঘাসের মধ্যে একা একা বসে থাকল। বেলা ৩.৩০ মিনিটের দিকে
সে বাসায় ফিরে বাথরুমে ঢুকে গেল। গোসল সেরে বের হয়ে টিভির সামনে বসল হাতে খাবার
প্লেট। টিভিতে ন্যাশনাল জিওগ্রাফী দেখতে দেখতে জাহিদ খাওয়া শেষ করল। মীরা ওর পাশে
বসে আছে ঠিকই কিন্তু টিভি দেখছে না।এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। খাওয়া শেষ করা
পর্য্ন্ত মীরা ওর দিকে তাকিয়ে থাকল। জাহিদ উঠে চলে গেলে রিমোটটা নিয়ে কার্টুন
নেটওয়ার্ক ছেড়ে দিল। জাহিদ ঘরে ঢুকে ব্যাগটা রাখার সময় খেয়াল করেনি এখন দেখল পাথরটা
যথাস্থানে ফিরে এসেছে। নিশ্চই মীরা আবার ওটাকে এখানে এনেছে। জাহিদ আগে বই আর
কাগজপত্রগুলো দেখল সব ঠিক আছে কিনা। সব ঠিকঠাক নিশ্চিত হয়ে ও ডাক দিল ..... মীরা
!
মীরা কোন উত্তর দিলনা। কিন্তু দশ
সেকেন্ডের মধ্যেই সে জাহিদের সামনে এসে দাড়ালো আর জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।
জাহিদ টেবিলের ওপরের পাথরটিকে নির্দেশ
করে বলল এটাকে কে এখানে রেখেছে? তুমি?
মীরা মাথা এপাশ ওপাশ করলো।
মাথা নাড়লে হবেনা মুখে বল।
আমি না।
তাহলে কে?
আমি জানিনা!
তাহলে এটা এখানে কিভাবে এলো? সকালে
ডাইনিং টেবিলে যে পাথরটা তোকে দিয়েছিলাম সেটা কোথায়?
আমার কাছেই আছে।
কোথায় আছে দেখাতো দেখি?
দাড়াও আমি আনছি বলে মীরা ঘর থেকে বেরিয়ে
গেল।পাচঁ মিনিট গেল,দশ মিনিট গেল মীরা আর আসলো না। জাহিদ যা বোঝার বুঝে গেল। আগামী
কাল শুক্রবার। এ সপ্তাহে অনেক চাপ গেল দুইটা অ্যাসাইনমেন্ট আর চার চারটা
টিউটোরিয়ালে এটেন্ড করতে হয়েছে। বেশ ক্লান্তিকর একটা সপ্তাহ। কালকের দিনটা রিলাক্স
করে কাটানো যাবে,ভাবতেই শরীরটা ক্লান্তিতে অবশ হয়ে আসতে চাইলো। সে একটা উপন্যাস
টেনে নিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। পড়তে পড়তে সে হারিয়ে গেল। আইজ্যাক আসিমভের একটা
সায়েন্স ফিকশন “দ্যা
গডস দেমসেলভস্। অসাধারণ এক কল্পনা করেছেন লেখক। তিনি এক প্রজাতির বুদ্ধিমান প্রাণীর
কথা বইতে বলেছেন যারা তিনটি লিঙ্গে বিভক্ত। লেফট,রাইট আর মিডিল। প্রানী গুলি মিলিত
হতে হলে তিনজন একসাথে মিলিত হতে হবে তা ছাড়া সম্ভব নয়। এই ই শেষ না এক পর্যায়ে এই
প্রানীরা চূড়ান্ত মিলিত হয়ে অন্য একটা প্রজাতিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়। জটিল ব্যাপার
কিন্তু ভিন্ন মাত্রার একজন কল্পনা বিলাসী না হলে এই রকম একটা লেখা সম্ভব না। জাহিদ
সাতষট্টি পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে বাথরুমে গেল।সে বাথরুম থেকেই শুনতে পেল ওর ঘরে ঠকাস
করে একটা শব্দ হল। ফিরে এসে ও দেখল ওর টেবিলের ওপর আর একটা পাথর। এখন মোট দুইটা।
মীরা হয়তো ঘরে না ঢুকে দরজার পাল্লা ফাঁক করে পাথরটা টেবিলের ওপর ছুড়ে দিয়েছে। এখন আর মীরার প্রতি জাহিদের কোন
রাগ উঠলো না। অন্য রকম একটা ফিকশন পড়ার কারণে মনটাও অন্যরকম হয়ে আছে। এ কারণেই ও
কারোর ওপর রাগ করতে পারছে না। তবে এখন থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সব ড্রয়ারে তালা
দিয়ে রাখতে হবে। তাহলেই দুষ্ট ছোট বোনটার হাত থেকে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে।জাহিদ
আবার বই নিয়ে বসল।
ঐ দিন রাত ৩.৩০ মিনিটের সময় একটা আওয়াজে
জাহিদের ঘুম ভেঙ্গে গেল। সে বিছানা থেকে উঠে বাতি জ্বালালো। দেখলো টেবিলের ওপর
আবার সেই পাথর। ওর স্পষ্ট মনে আছে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করেছিল
এবং এখন পর্যন্ত তা বন্ধই আছে। তাহলে ওটা আসলো কোত্থেকে। ও হলপ করে বলতে পারে
টেবিল থেকে দরকারী কাগজপত্র সরিয়ে ড্রয়ারে রেখে তালা দিয়েছিল তখন আগের পাথর দুটোও
ড্রয়ারে রেখে দিয়েছিল। মনে হতেই চাবি দিয়ে ড্রয়ার খুললো সে। আগের দুটো সেখানেই
আছে। দরজা জানালা বন্ধ থাকা অবস্থায় তৃতীয় আরেকটা টেবিলের ওপর আসলো কি করে? তিনটা
পাথরই ও ডেক্সের ওপর রেখে চেয়ারে বসে পড়ল। তিনটারই সাইজ ও কালার এক হলেও আকৃতি
কিছুটা ভিন্ন । ও গালে হাত দিয়ে কনুইটা টেবিলের ওপর রেখে ভাবছে পাথর দুইটা ড্রয়ারে
তালা বন্ধ করার পর ঘর ছেড়ে কোথাও গিয়েছিল কিনা। সেই ফাঁকে মীরা হয়তো ঢুকে আরেকটা
টেবিলে রেখেছে। কিন্তু ও যখন গোছগাছ করে তখন রাত ১২.৩০ বাজে। অত রাত পর্যন্ত মীরার
জেগে থাকার কথা নয়। ওর কি কোথাও ভুল হচ্ছে হয়তো পাথরটা ওখানেই ছিল ও খেয়াল করেনি।
না সেরকমতো হওয়ার কথা নয়। তাহলে! ওর ঘুমই বা ভাংলো কিসের শব্দে? মনে হতেই একটা
পাথর ও টেবিল থেকে হাত খানেক উঁচুতে নিয়ে ছেড়ে দিল। পাথরটি আওয়াজ করে টেবিলের ওপর
পড়ল। ঠিক এই রকম একটা শব্দেই ওর ঘুম ভেঙ্গেছে। হঠাৎ করে ঘুম থেকে উঠে ও ঠিকমত
চিন্তাও করতে পারছেনা। যা ভাবার আগামীকাল ভাবা যাবে এই রকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে
উঠতে যাবে হঠাৎ ওর চোখের সামনে একটা আলো জ্বলে উঠলো। একেবারে ওর মূখের কাছেই অল্প
কয়েক ইঞ্চি দূরে। নীলচে একটা বিন্দুর সমান আলো। ওর হৃৎপিন্ড ঢকাস করে বাড়ি খেল।
উত্তেজনায় আর ভয়ে ও চেয়ার থেকে দাড়িয়ে পড়ল। হাত দুয়েক পিছিয়ে গেল। নীল আলোটা জ্বলা
নিভা করে একটু একটু বড় হচ্ছে। হঠাৎ ও বুঝে ফেললো সাথে সাথে সমস্ত ভয় উধাও হয়ে গেল।
কিন্তু হৃৎপিন্ডের গতি স্বাভাবিক হলনা।
উত্তেজনায় অনেক বেশি রক্ত পাম্প করা শুরু করেছিল। এখন নরমাল অবস্থায় আসতে সময়
লাগবে। নিজের হৃৎপিন্ডের শব্দ ও নিজেই শুনতে পারছে বিশ্রী আর হাস্য কর লাগছে। ঘরের
মধ্যে জোনাকী ঢুকেছে। পাথর নিয়ে চিন্তামগ্ন ছিল বলে হঠাৎ জোনাকী জ্বলে উঠাতে ও ভয়
পেয়ে গেছিল। কিন্তু জোনাকী তো উড়াওড়ি করবে আর আলো ছড়াবে। ওটা একদম কন্সট্যান্ট
স্থির হয়ে আছে কেন? আর ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। নীল আলোটা আস্তে আস্তে আরও বড় হয়ে গেল।
একটা আপেল সাইজে আসার পর জাহিদের ভয়টা আবার ফিরে আসল।জাহিদ স্পষ্ট দেখল নীলচে
আলোটা জ্বলা নিভা করতে করতে একটা পর্যায়ে এসে থেমে গেল।তারপর ওটা আস্তে আস্তে
উজ্জ্বল্য হারিয়ে সাদা হয়ে গেল । একসময় নিভে গেল কিন্তু আলোর জায়গায় হলদেটে একটা
কি যেন শুন্যে ভাসছে। জাহিদ এগিয়ে গেল। শুন্যে একটা পাথর ঝুলে আছে। আগের গুলোর মত। পরমুহুর্তেই ওটা ঠকাস করে
টেবিলে পড়ল। আগের পাথর গুলোর সাথে যুক্ত হল। এখন টেবিলে মোট চারটা পাথর পড়ে আছে।
জাহিদ বিকট চিৎকার দিল। দরজা খুলে ছুটে বের হল। একনাগাড়ে চিৎকার করেই যাচ্ছে। সে
ডাইনিং টেবিলের সাথে গুতো খেয়ে কাচের গ্লাস প্লেট ইত্যাদি সব মেঝেতে ফেলে ভেঙ্গে
ফেলল। বাড়ির সবাই উঠে আসল। চোর এসেছিল কিনা, কি হয়েছে, জাহিদ তুই এরকম করছিস কেন
ইত্যাদি ইত্যাদি কথাবার্তা আর চিৎকার চেঁচামেচি চলতে থাকলো।
আস্তে আস্তে সব ঠান্ডা হলে জাহিদ কিছুটা
স্থির হল। সবকিছু শুনে জাহিদের বাবা জাহিদকে বললো তুমি হঠাৎ করে কলেজ ছেড়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছ। অত্যাধিক পড়াশোনার চাপে মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এই কারণে
এরকম হচ্ছে। তুমি পড়ালেখা বাদ দিয়ে সপ্তাহ খানেক রেষ্ট নাও। ভাল খাওয়া দাওয়া করো
আর খোলা বাতাসে ঘোরাফিরা কর সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু বাবা আমি নিজে চোখে নীল আলো
দেখেছি আর পাথর ভেসে থাকতে....।
জাহিদরে বাবা জাহিদকে হাত তুলে থামালেন।
স্বপ্ন দেখেছ। ঘুমাতে যাওয়ার আগে পাথর নিয়ে ভেবেছিলে বলেই স্বপ্নে দেখেছ নীল আলো
পাথর হয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু তাহলে পাথরগুলো আসলো কি করে?
পাথরগুলো হঠাৎ করে আসেনি কেউ একজন রেখেছ।
হয়তো মীরাই রেখেছে। তুমি দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে চেচামিচি শুরু করেছো। খুবই
সিম্পল। যাও ঘুম না আসলেও শুয়ে থাক। সকালে আলোচনা করা যাবে।
জাহিদ মনমরা হয়ে ঘরে ঢুকে শুয়ে পড়লো।
দরজা খোলা রেখেই। বারে বারে টেবিলের দিকে চোখ চলে যাচ্ছে যেখানে নীল আলো জ্বলে
উঠেছিল। জাহিদ গুনে দেখল টেবিলে চারটা পাথর। রাতের পরের অংশে ও আর ঘুমাতে পারলোনা।
শুক্রবারও চিন্তা মগ্ন ভাবে কাটালো। সারাটা দিন জাহিদ চুপচাপ বাড়িতে বসে থাকল।
রাতে খাবার পর বাবা ওর ঘরে এসে হালকা কথাবার্তা বললেন।যাওয়ার আগে একটা স্লিপিং পিল
ওকে খাইয়ে দিয়ে গেলেন। জাহিদ মড়ার মত ঘুমাল। সকালে উঠেই টেবিলের ওপর চোখ গেল। নাহ
কোন পাথর টাথর নেই। আগেরগুলোও হয়তো ওর বাবা সরিয়ে ফেলেছেন।
দশ বারদিন পর
এই কয়েকদিন পাথর সংক্রান্ত কিছু ঘটেনি।
জাহিদও স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। আবার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিন বাসায়
ফিরে দেখলো মীরা ওর বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে। জাহিদ গোসল সেরে এসে খাবার নিয়ে বসলো।
লাল শাক দিয়ে খাওয়া শেষ হয়েছে ডিম নিতে যাবে এমন সময় মীরা চিৎকার করে উঠলো। জাহিদ
ছুটে ঘরে ঢুকতেই দেখে মীরা আঙ্গুল উচিয়ে ওর টেবিলটার দিকে নির্দেশ করে আছে। ওখানে
নীল আলো জ্বলছে ঠিক আগের মত। একদম হুবহু আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো ওর চোখের
সামনে। ঘটনার আকর্ষির্কতায় ও খেয়াল করেনি ওর মা আর ভাবীও মীরার
চিৎকার শুনে ওর ঘরে ছুটে এসেছে। তারাও ঘটনার শেষ অংশ অবলোকন করল । পাথরটা
শব্দ করে টেবিলের ওপর পড়ার পরেও মিনিট খানেক কারো মূখ দিয়ে কথা সরলোনা।
পরের দিন মৌলভী ডেকে এনে সমস্ত বাড়িতে
দোয়া দুরুদ পড়ে ঝাড়ফুক করা হলো। মীরা আর জাহিদকে স্পেশাল তাবিজ দেয়া হলো। বাড়ির
বিভিন্ন জায়গায় তাবিজ ঝুলিয়ে দেয়া হলো। আসবাব খালি করে অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়া হলো।
ঘরের ভিতর ধুপ ধোয়া করে নানা রকম দোয়া দুরুদ পড়া হলো। সামনের মাস থেকেই ওরা নতুন
বাসায় উঠে যাবে ঠিক হলো। ওরা ছয় সাত বছর
হলো এ বাড়িতে আছে অথচ এরকম ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি। কয়েকদিন ভয়ে ভয়ে কাটলো কিন্তু
আর কিছু ঘটলোনা। সবাই মনে করলো বেশ ভালমতই ঘরবাড়ি বন্ধ করা হয়েছে। মৌলভীর তাবিজ ও
দোয়ায় কাজ হয়েছে। পরের মাসেই নতুন ভাড়া বাসায় যাওয়ার কথা থাকলেও দুই মাস কেটে
গেলেও ওরা ওই বাসাতেই থাকলো। যেহেতু নতুন
করে আর কিছু ঘটেনি তাই ওরাও আর বাসা বদল করেনি। জাহিদ
ঘটনা গুলোর কোন ব্যখ্যা দাড় করাতে পারেনি। মনে মনে অনেক ভেবেছে বন্ধু বান্ধব যার
সাথেই শেয়ার করতে গেছে সবাই এক বাক্যে ভুত জ্বীন এনে ঘটনার সমাধান করে
দিয়েছে। কিন্তু জাহিদ ওসব বিশ্বাস করেনা আবার নিজের চোখকেও অবিশ্বাস করতে পারেনা।
দেখতে দেখতে ওর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সেমিস্টার শেষ হয়ে গেল। জাহিদ
শেষ পরীক্ষার দিন একগাদা গল্প উপন্যাস কিনে নিয়ে বাসায় ফিরলো।
রাতের খাওয়ার পর ও বইগুলো নিয়ে বসল কোনটা
দিয়ে শুরু করবে। আর ঠিক তখনই আজব
ব্যাপারটা শুরু হল। আগের দুইবার যেখানে হয়েছে তার থেকে একটু ডান দিকে নীল আলোটা জ্বলে উঠলো।
জাহিদ এবার কোন চিৎকার চেঁচামেচিতে গেল
না। নিশ্চুপ হয়ে সে ভালমত অবলোকন করতে লাগলো। নীল আলোটা এবারে গোলাকৃতি না হয়
উপর নিচ লম্বা হয়ে গেল। আর মিলিয়ে যাওয়ার আগে একটা কাল বস্তু
হয়ে শুন্যে ঝুলে থাকল। এবার পাথর নয় মেঝেতে পড়ল কাল রঙের একটা ছোট্ট নোটবুক। জাহিদ
অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে জিনিসটা ভয়ে ভয়ে তুলে
নিল। খুলতেই দেখতে পেল ছোট্ট ডায়রিটাতে অল্প কয়েক পাতা লেখা রয়েছে।
জাহিদ কম্পিত হাতে ধরে ডায়রিটা পড়তে শুরু
করলো।
“ আমি খন্দকার ইলিয়াছ আহমেদ। পদার্থ বিজ্ঞানী। আমি আমার
ল্যাবে একটা ছোট খাট টাইম মেশিন তৈরি করেছি। ওটা দিয়ে খুবই ছোট ছোট জিনিস
সামান্য কয়েক বছর এদিক ওদিক করা যায়। জিনিসগুলো শুধুই
ভবিষ্যতে পাঠানো যায়। কারণ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সমূহে অতীতের পথকে অনুমোদন করেনা। এটা
২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ। আমার ধারণা আমি যে পাথরগুলোকে ভবিষ্যতে
পাঠিয়েছি তা ২০৪০ সালের কাছাকাছি কোন একটা সময়ে গেছে। এক দুই
বছর এদিক ওদিক হতে পারে। আমার এই ট্রান্সপোর্টেশন যন্ত্রটা
বড় করা সম্ভব নয়। যতটুকু পাঠিয়েছি তার থেকে বড় স্কেলের বস্তু পাঠানোর জন্য
প্রয়োজনীয় তত্ত্ব ও উপকরণ কোনটাই এই সময়ে নেই। কেউ যদি চাক্ষুস ভাবে পাথরগুলিকে
ট্রান্সপোর্ট হতে না দেখে থাকে তাহলে ব্যাপারটার কোন গুরুত্ব থাকবেনা। এই কারণে
আমি পর্যায়ক্রমে ২০৪০,২০৬০,২০৮০ এবং ৩০০০ সালে পাথর ও নোটবই পাঠিয়েছি। মোটামুটি
সপ্তাহ খানেক ধরে শুধু এটার পিছনেই পড়ে আছি। অন্যান্য সময় গুলোতে
পাঠানো নোটবইতে লেখাগুলি সামান্য কিছু পারিবর্তন করা হয়েছে। হঠাৎ
করে পাথরগুলিকে উদয় হতে দেখে কেউ বিভ্রান্ত হতে পারে। আমি এক্সপেরিমেন্ট করার সময়
এতই উত্তেজিত ছিলাম যে ব্যাপারটা মাথাতেই ছিলনা। যাই হোক ২০৪০,২০৬০,২০৮০ আর ৩০০০
সালে পাথর পাঠানোর পর আমার মাথায় ব্যাপারটা আসলো। আর তখন প্রত্যেকটা সময়ে একটা
একটা করে নোট বই পাঠালাম। বিজ্ঞানের কাজ বিভ্রান্তি দূর করা নতুন করে বিভ্রান্তি
সৃষ্টি করা নয়। আমি আমার ট্রান্সপোর্টেশন যন্ত্র এবং সে সংক্রান্ত তথ্য নষ্ট করে
ফেলবো। আমি যদি ২০৪০ সাল পর্যন্ত বেঁচে থাকি তাহলেই
জানতে পারবো আমার পাঠানো জিনিষগুলি আসলেও ভবিষ্যতে যায় নাকি কোথাও হারিয়ে যায়। আমি
এক বা দুই বছর পর এমনকি দুই দিন পরে বস্তু পাঠিয়ে সহজেই নিশ্চিত হতে পারতাম। কিন্তু
২০৪০ সালের আগে সেটাকে কোন ক্রমেই পাঠানো সম্ভব হয়নি।
যন্ত্রটাকে এতো কম সময়ের ব্যবধানে সেট করা গেলনা। এটা অনেকটা চোখের অতি নিকটের
বস্তু স্পষ্ট দেখতে না পাওয়ার মত একটা ব্যাপার। যাই হোক কেউ যদি ও
গুলো পেয়ে থাকে তো তার জন্য আমার শুভ কামনা। ২০৪০ সাল পযর্ন্ত
টিকে থাকলে আমিই তাকে খুঁজে বের করবো। আমার
এখনই বয়স ৭৬ বছর। মনে হয়না তা সম্ভব হবে।
জাহিদ নোটবইটার কথা কাউকে বিশ্বাস করাতে
পারলোনা। আর খন্দকার ইলিয়াছ আহমেদ নামেও জীবিত কাউকে খুজেঁ পেলনা। কোন বস্তু যদি
হঠাৎ ২৪ বছর সামনে চলে আসে তাহলে বস্তুটিতে কি কি পরিবর্তন হতে পারে। বস্তুটি যদি
ভবিষ্যত থেকে আসতো তাহলে তা কার্বন ডেটিং করে প্রমান করা যেত। পাথরগুলো আর নোট
বইটা যে ২৪ বছর আগের তা প্রমান করা গেলেও ওগুলো যে দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত না করেই
হঠাৎ করে ২০৪০ সালে হাজির হয়েছে এটা প্রমান করার কোন উপায় জাহিদের জানা নেই।
No comments:
Post a Comment