বিপ্লবের পরে...
জাহিন,আলোরমেলা
,কিশোরগঞ্জ।
হৃদিতা,
আমার জীবনের সাথে ওতোপ্রোত ভাবে মিশে আছে নামটি। অথচ হৃদিতা নামের এই মানুষটিকে আমি কাছে পেয়েছি খুবই অল্প সময়।
আসলে মাত্র দু’টি পৃথক সময়ের সমষ্টি কালের জন্য।
মাত্র দু’বারে কি ভালোবেসে ফেলেছিলাম হৃদিতাকে?
হৃদিতার সাথে আমার পরিচয়,
তারপর পাক্কা বারো বছর কোনো খবর নেই। বারো বছর পর হৃদিতা ফিরে আসলো আমার জীবনে। আমাকে উপহার দিলো আমার দেখা ঊনপঞ্চাশটি বসন্তের শ্রেষ্ঠতমটি।
তারপর আবার............
হৃদিতার সাথে আমার পরিচয় কিভাবে মনে নেই। ক্লাস টেনের রোল এক মেয়েটির যে সে বছরই স্কুলে নতুন আসা ছেলেটির কথা বারো বছর পরও খুব মনে আছে সেটা জেনে খুব খুশী হয়েছিলাম সেবার।
হৃদিতার বাসা ছিলো আমাদের পাড়ারই অন্য পাশে। তখন আমি চিনতাম না। ক্লাস টেনে থাকতে হৃদিতা তার বাসা চেনাতে চেয়েছিল আমায়।
হৃদিতা এখন কোথায় আছে আমি জানি না।
ও যদি বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা কলেজের টিচার হয়ে থাকে তাহলে যে বিশেষ সুবিধে করতে পারছে তা আমি জানি। সেদিন কাঁচকলাটাও চেনাতে পারেনি আমাকে। হাত নাড়িয়ে,কাগজে এঁকে কত কিছু করে বোঝাতে চেয়েছিলো!
তখন তার বিচিত্র অঙ্গ-ভংগি দেখে মনে মনে ভাবছিলাম এই মেয়ের কি এতো দায় পড়েছে আমায় বাসা চেনানোর!!
আরেকটা ঘটনা মনে আছে,
কোনো এক বায়োলজি প্র্যাকটিক্যালে বই থেকে কিছু আর্টিকেল ছাপ কাগজে তুলে নিচ্ছিলাম,হৃদিতা এসে ঠাস করে বই বন্ধ করে দিলো। বললো না দেখে এঁকে নিতে।
অদ্ভূত শাসন!
পরের বছর মফস্বল ছেড়ে বড় শহরে চলে আসি আমি। বারো বছরে তার কোনো খবরা-খবর রাখিনি। একদমই ভুলে গিয়েছিলাম যে তাও না। মাঝে মধ্যে মফস্বল থেকে আসা লোকেদের মুখে নাম-ধাম শুনতাম। একটু-আধটু মনে করার চেষ্টা করতাম তাকে।
তারপর ভুলে যাওয়া।
ভুলে যাওয়াটা এমন পর্যায়ের যে,গত বারো বছরে যে কবার মফস্বলে আমাদের বাড়ি এসেছি,রাস্তায় আমি তাকে কখনোও পেয়েছি বলে মনে করতে পারছি না। অথচ ও আর আমি মফস্বলে একই পাড়ায় থাকতাম।
অতঃপর বারো বছর পর,
অমল আর চারুর দেখা হয়ে গেলো সাইবার ওয়ার্ল্ডে।
পুরো নাম জানতাম না,তাই প্রথমে চিনতেই পারি নি।
কি একটা স্ট্যাটাস খুব ভালো লেগে গিয়েছিলো,ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দেই। একসেপ্টও করলো। সব কিছুতেই স্ট্রং ওপিনিয়ন ছিলো ওর। এটা দেখেই কেনো যেনো ওকে জানার ইচ্ছা হলো। ক’দিনেই নিশ্চিত জেনে গেছি ওই সেই ক্লাস টেনের মেয়ে। কিন্তু ওর সম্পর্কে ডিটেইল কিছুই তো জানতাম না। রীতিমত তদন্ত করতে হয়েছে ওর জন্য!
প্রথমদিকে,ভালো করে চিনি না বলে (বারো বছর একটা বিশাল ব্যবধান),হৃদিতাকে নিজের ব্যাপারে কিছুই বলতাম না। শেষে অবশ্য নিজ থেকে সব বলতাম। আর হৃদিতা কি আমাকে কিছু বলতে?!
ভুলে গেছি।
তবে ও কিছু না বললেও আমার বারবার মনে হয়েছে ওর ভেতরটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম।
তার খাঁদহীন আন্তরিকতা,শক্তিশালী মতামত আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। যাই হোক আমার স্নায়ুর ওপর আমার অসীম নিয়ন্ত্রণ ছিলো। তাই ওর প্রতি ভালোবাসা জাগেনি কখনোই। যা ছিলো তা শ্রদ্ধা। সুন্দর মন আর চেতনার একটা মানুষের জন্য যা থাকা উচিত।
আমার একটা স্বপ্ন ছিলো (আজ তা বাস্তব)।
শুধু আমার না,আমাদের স্বপ্ন।
আমি হৃদিতার কথা বলেছিলাম আমার স্বপ্ন দেখার সঙ্গীদের। তারা চেয়েছিলো হৃদিতাকেও আমাদের স্বপ্ন দেখাতে,আমাদের একজন করে নিতে। আমি দ্বায়িত্ব নিলাম তাকে স্বপ্ন দেখানোর। আমার স্বপ্ন দেখার সঙ্গীরা ঠাট্টা করে বলেছিলো,ওকে আমাদের স্বপ্ন দেখাতে গিয়ে না যেনো আমি হৃদিতার স্বপ্ন দেখে ফেলি!
দৃঢ় প্রত্যয় ছিলো,ছিলো কঠিন ব্রত।
স্নায়ুকে মনের বিরুদ্ধে নেয়ার শিক্ষা আমার ভেতর ছিলো। তাই কখনো ভালোবাসাটা জাগেনি। কখনো কখনো উঁকি দিলেও দমন করেছি ভীষণ ভাবে।
পরবর্তী জীবনে,নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার অসীম ক্ষমতার কথা ভেবে গর্বিত হয়েছি বারংবার।
হৃদিতাকে স্বপ্ন দেখানোর কাজে এগিয়ে যাচ্ছিলাম বেশ। হঠাৎ একদিন অজানা কারণে হৃদিতা চলে গেলো ভার্চুয়াল জগত থেকে। আমিও আর খোঁজ নেইনি। মফস্বলেও যাওয়া হয়নি আর। কি সব নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আরো একবার হৃদিতা বিস্মৃতি হয় আমার মন থেকে ।
আজ অনেক বছর পর (প্রায় ২১ বছর),আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শ্রমিকের একনায়কতন্ত্র।
স্বপ্নময় উদ্যানে আজ হচ্ছে সম্পদের সুষম বন্টন।
কিন্তু
আমার ভাগে ভালোবাসা পড়েনি।
ভালোবাসা বন্টনকারী সহযোদ্ধকে জিজ্ঞেস করলাম,
আমার ভাগের ভালোবাসা কই?
সহযোদ্ধার নির্লিপ্ত উত্তর-
‘তোমার চাহিদায় তো কখনো ভালোবাসা ছিলো না’।
আমি হৃদিতাকে ভালোবাসতাম না।
নিশ্চিত হলাম।
No comments:
Post a Comment