সেটা হলো বাস ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষের
মূহুর্তে বাসটি একটা ফোর্থ ডাইমেনশনাল দরজার সামনে পড়ে যায়। সেখান দিয়ে
ঢুকে বাসটি অন্য কোথাও চলে এসেছে। অন্য
কোন সময়ে এবং সম্ভবত অন্য কোন স্পেসে। এই যায়গা হয়তো পৃথিবীর কোন জায়গা নয় হয়তো
অন্য কোন গ্যালাক্সির অন্য কোন গ্রহ। কিন্তু কাকতালীয় ভাবে সেটার প্রাকৃতিক পরিবেশ
একদম পৃথিবীর মতো। কারণ এতগুলি মানুষের শ্বাস নিতে কোন অসুবিধা হচ্ছেনা অর্থাৎ
বাতাসে সঠিক পরিমানে অক্সিজেন আছে। কেউই অস্বাভাবিকভাবে হাটাচলা করছেনা অর্থাৎ
পা টেনে তুলতে বেশি বল প্রয়োগ করতে হচ্ছেনা। আবার হাটতে
গিয়ে লাফিয়ে কেউ বেশি দূরে সরেও যাচ্ছেনা। এর মানে এই যে
এই গ্রহটার মহাকর্ষও অবিকল পৃথিবীর মত। নক্ষত্রটাও
সূর্যের কাছাকাছি আকারের। অন্তত সূর্য পৃথিবী দূরত্বের জন্য সূর্যের যে আয়তনের জন্য পৃথিবী
পৃষ্ঠ থেকে ওটাকে যে আকারের দেখায়, এখানেও মোটামুটি একই আকারের দেখাচ্ছে। হতে পারে
নক্ষত্রটা সূর্য থেকে অনেক বড় বা ছোট। বড় হলে এই গ্রহটা আছে ১৫ কোটি কিলোমিটার
থেকে অনেক বেশি দূরত্বে। এমন একটা বেশি দূরত্বে যে দূরত্ব থেকে নক্ষত্রটার সাইজ দেখাবে
পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে সূর্যের যে সাইজ দেখায় প্রায় সেই রকম। আর
ছোট হলে
গ্রহটা আছে ১৫ কোটি কিলোমিটার থেকে কম দূরত্বে। সেই কমটা এই
রকম কম হবে যে গ্রহ পৃষ্ঠ থেকে নক্ষত্রটার আকার দেখাবে সূর্যের মত। অনেক
বেশি কষ্ট কল্পনা হয়ে যাচ্ছে। তা হলেও সম্ভব এটা একটা সম্ভবনা। তবে
আমি মনে মনে প্রার্থনা করি যেন প্রথমটা সত্যি হয় । ঘুম থেকে উঠে
দেখি সব কিছু স্বাভাবিক ।
সকাল
হলো ,সূর্য উঠলে আমরা সবাই বাস থেকে নামলাম এবং বক্স
থেকে যার যার লাগেজ বের করলাম। আমরা ঠিক করলাম অন্তত এমন স্থানে সরে যাব
যেখানে পাথরগুলি নেই অথবা অপেক্ষাকৃত কম । তা না হলে
ওগুলোর নিচে পড়ে হয়তো প্রাণটা হারাব। আমরা সরে পড়ার আগে মৃতদেহগুলি যথাসম্ভব বালি
আর আলগা মাটি দিয়ে ঢেকে দিলাম। এখানে মাটি বলতে একধরনের কালচে কাচ বা সিরামিকের
গুড়ো। আমাদের কাছে খাবার বলতে ছিল কিছু পানীয় আর শুকনো খাবার যেমন চিপস,
ফল যেগুলো রাতেই শেষ হয়ে গেছে। সূর্য কিছুদূর
উঠতেই ক্ষুধা আর পিপাসা তীব্রভাবে অনুভূত হল। আমরা কোন দিকে
যাব এ নিয়ে মত বিরোধ হল।
একেকজন একেক দিকে নির্দেশ করলো। কেউ
কেউ বাসের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করল। অবশেষে
ঠিক হলো ছোট ছোট চারটি দল চার দিকে ছড়িয়ে পড়ে খোঁজ নিয়ে আসবে কোন দিকে যাওয়া
আমাদের জন্য সুবিধাজনক হবে বা খাবার ও পানি পাওয়া যাবে। তারা অবশ্যই
সূর্য মাথার উপর আসার আগে ফিরে আসবে এবং আমরা সবাই বিচার বিবেচনা করে সুবিধামতো
দিকে ভ্রমন করবো। আমি বাসের কাছে মূল দলটার কাছে থেকে গেলাম। তিনজন করে
চারটি দল চারদিকে চলে গেল। সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে গেলেও তাদের কেউ
ফিরে আসলনা। তাদেরকে খুজতে আরো দুইজন করে পাঠানো হলো। শেষের আটজন
কিছু সময় পরে ফিরে আসলো। তারা জানাল পাথর ছাড়া তারা আর কোথাও কিছু দেখেনি। কোন
গাছপালা, প্রানী এমনকি ছোট ঝোপ
ঝাড় জঙ্গল বা শেওলা পর্যন্ত নেই। বাকিদের কোন
খোঁজ নেই। অবশেষে সন্ধ্যা নামার কিছু সময় আগে পূর্ব দিকের তিনজন ফিরে আসলো। তারা
জানাল তারা পথ ভুল করেছিল সব জায়গা নাকি দেখতে একই রকম শুধু পাথর আর পাথর। ওদেরই
একজন নাকি সূর্যের অবস্থান দেখে হিসাব করে ওদেরকে সঠিক যায়গায় ফিরিয়ে এনেছে। এই তিনজন সারাদিন হেটে অনেক
ক্লান্ত। খালি পেটে অমানুষিক পরিশ্রম করার কারণে মাটিতে বসে হাপাতে লাগলো। পানি
অল্প কিছু যা ছিল ওদেরকে দেওয়া হলো ।
No comments:
Post a Comment