অকস্মাৎ বাসটা ঝাকুনি
খেল। সাথে সাথে চারপাশের কুয়াশা মিলিয়ে গেলে। বাসের মধ্যে সাধারণ শব্দ গুলো ফিরে আসলো। বাসটা প্রচন্ড গতিতে হঠাৎ ছুটে গিয়ে কিসের সাথে যেন আঘাত খেয়ে
থেমে গেল। মনে হলো বাসটাকে কেউ যেন গুলতি থেকে ছুড়ে দিয়েছে। আমি অবাক হয়ে দেখতে পেলাম বাসের চারপাশে ধুধু প্রান্তর কোন
সবুজ বা হলুদের চিহ্ন মাত্র নেই। আমি তাড়াহুড়ো করে অন্যান্য যাত্রীদের সাথে
নামলাম। বাসটা একটা বড় পাথরের সাথে গুতো খেয়ে সামনেটা মুষড়ে গেছে। রেডিয়েটর দুমড়ে ভেতরে ঢুকে গেছে। হাইওয়ে কোথায়? ধুধু প্রান্তর আশে পাশে অসংখ্য পাথর ছোট,
বড়,
মাঝারি,
বৃহৎ,
বৃহৎ থেকে বৃহত্তর
এবং তার থেকেও প্রকান্ড সাইজের। ওটা অন্য একটা জায়গা। এখানে কেমন করে আসলো। আমি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছি। আমাদের বাসটার শেষ মূহুর্তে
ট্রাকটার সাথে ধাক্কা খাওয়ার কথা ছিল। তা না হয়ে আজব একটা জায়গায় হাজির
হয়েছে। আমার পাশের সীটে বসা ভদ্রলোক হঠাৎ পাশ থেকে
বলে উঠলো ‘ওই শালার ড্রাইভার,
এটা কোন জায়গায় আইসোস’। বাসের ড্রাইভার কপাল ধরে এই মাত্র বাস থেকে নামলো। পাথরের সাথে ধাক্কা খাওয়ার সময় তার মাথা মনে হয়
স্টীয়ারিং এর সাথে ঠুকে গেছে। সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। সে বললো আমি কোথাও আনি নাই ট্রাকের সাথে অ্যাক্সিডেন্ট
বাঁচাতে হার্ড ব্রেক করেছি এখনতো দেখি পাথর। আশেপাশে নানা রকম গুঞ্জন উঠলো। এটা কোন জায়গা এরকম কোন
স্থানের কথা তো বাপের জন্মেও শুনিনি। বাস যে রাস্তা দিয়ে আসলো সেটাইবা
কোথায় গায়েব হয়ে গেল। আমি দ্রুত
একজনকে ডেকে একটু
পাশে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম বাসের মধ্যে এবং আশেপাশের সবকিছু কেমন স্থির হয়ে
গিয়েছিল আপনি খেয়াল করেছেন। আপনি কি দেখেছিলেন,
সবকিছু গলতে শুরু করেছিল।
লোকটা অদ্ভুত
দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো বললো আমার কিছু মনে নেই আমি ঘুমাচ্ছিলাম । জেগে দেখি এই
অবস্থা। এখানে বাসটারে আনলো ক্যামনে? আপনারা কেউ কি জেগে ছিলেননা। আমি না হয় ঘুমিয়ে ছিলাম। আপনারা কেউ বাধা দিলেন না ক্যা। আমি উল্টো ফাঁপরে পড়ে আমতা আমতা করে
সরে গেলাম। কয়েকজন একটু দূরে কন্টাকটরের সাথে বাকবিতন্ডা করছে। একপর্যায়ে একজন তার কলার ধরে ঝাকাতে শুরু করলো। আমি একটু দূরে দাড়িয়ে আছি। আমার অত্যন্ত পিপাসা হলো। আমার সাথে হাফ লিটার পানির
বোতল ছিল।
বাসে উঠে বোতলটা নিয়ে
বেরিয়ে আসলাম। কয়েক ঢোক পানি পান করে মূখ ধুয়ে ফেললাম। বাসের হেল্পার, ড্রাইভার, কন্টাকটর সহ চল্লিশ
পয়তাল্লিশজন মানুষ। সবাই বাসের চারদিকে ইতঃস্তত ছড়িয়ে পড়েছে। হঠাৎ জোরে বাতাস শুরু হলো। ক্রমেই বেগ বেড়ে ঝড়ের মত রুপ নিল। দূরে সূর্য ডুবতে বসেছে। ওটা সূর্য কিনা আমি নিশ্চিত না কারণ একটু বড় বড় লাগছে। বাতাসের সাথে ধুলা আর বালি উড়ে আসছে। আমি বাসের ভেতরে উঠে যেতে চাইলাম আমার মতো সবাই তাই চাইলো। বাসের গেটের সামনে হুড়োহুড়ি লেগে গেল। আমরা চারপাশে যে পাথরগুলি দেখছিলাম আশ্চর্যরকম কারণে সেগুলি সবই গোলাকার।
পরের অংশ
No comments:
Post a Comment