পরাবাস্তব ভ্রমন
সৈয়দ রিয়াজুল হক
আমার বাস দুপুর ১২ টায়।
এখন বাজছে ১২.২০ টা। আমি
লাগেজটা বক্সে দিয়ে বিরস মূখে সীটে বসে আছি। সীট নম্বার বি-২।
টিকেটে আমার সীট ছিল বি-১। জানালার পাশে।
উঠে
দেখি একজন ষন্ডামার্কা লোক ওই সীটে বসে আছে। আমি বললাম
এই সীটটা মনে হয় আমার। তিনি
চরম বিরক্তি সহকারে আমার দিকে তাকালেন।
বললেন আপনার সীট কত?
আমি বললাম বি ওয়ান। এই দেখেন, বলে
আমি আমার টিকেটটা ওনাকে দেখালাম। এবার
তিনি আরো বিরক্ত হয়ে নিজের টিকেটটা বের করতে করতে বললেন বি ওয়ান আমার সীট আমাকে দিয়েছে এই দেখেন।
আমি নিশ্চিত ছিলাম ওনার টিকেটে অন্য সীট
নম্বার দেখব।
কিন্তু
আশ্চর্য হয়ে গেলাম দেখে যে ওনার টিকেট নাম্বারও বি ওয়ান। আমি একটু
গলা চড়িয়ে ডাকলাম এই বাসের কন্টাকটর
কে?
একজন লোক সিঁড়ির নিচের
ধাপ থেকে উপরে উঠে আসলো, বললো
কি
হয়েছে। আমি বললাম
বি ওয়ান সীট ডাবল হয়েছে। বলে টিকিট দুইটাই
তার হাতে দিলাম। লোকটা ‘কাম সারেছে’ টাইপের
কিছু একটা বলে টিকেট দুইটা নিয়ে কাউন্টারে চলে গেল।
আমি আপাতত বি টু সীটটায় ওই বদখত চেহারার
লোকটার পাশে বসে পড়লাম। অবশেষে বাস যখন ছাড়লো ১২.২৫ বাজে। ঠিকঠাক মতো চললে কল্যানপুর পৌছাতে ছয়
ঘন্টা মতো লাগবে অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬.২৫
মিনিট এ আমি ঢাকায় ল্যান্ড করতে পারবো। ঘন্টাখানেক
পরেই বাস লালন শাহ সেতুতে উঠে আসলো। আমি
চেয়ারটা ভেঙ্গে দিয়ে রিলাক্স করে চোখ বুজলাম।
পাঁচ মিনিট পরেই
কন্টাকটর টিকেট দুটো হাতে নিয়ে ফিরে এসেছিল আর বলেছিল ভাই ভুল করে ডাবল হয়ে গেছে, খেয়াল করে নাই। একটা টিকেট বি-২ হবে। আপনারা দুইজন
একটু কম্প্রোমাইজ করে নিয়ে বসেন। আমি
কন্টাকটরের হাত থেকে টিকেট দুইটা নিয়ে ভদ্রলোকেরটা বেছে তাকে দিয়ে
দিলাম। ভদ্রলোকও কোন কথা বলল না। কতক্ষণ
ঘুমিয়ে ছিলাম মনে নেই। আমি সাধারণত রাত্রে জার্নি করলেও ঘুমাইনা। আর আজকে দিনে
দুপুরে কি করে ঘুমিয়ে গেলাম ভেবে আশ্চর্য লাগলো। ঘুম ভাঙতেই আমি
পকেট থেকে মোবাইলে সময় দেখে নিলাম তিনটা বাজে। আর আধা ঘন্টার
মধ্যেই ব্রেক দেবে। তারপর আমি গ্রীন চিলিস থেকে নানরুটি আর লটপটি খাব। আমি
সিটটা সোজা করে নিয়ে আশে পাশের চলন্ত দৃশ্যে মনোনিবেশ করার চেষ্টা করলাম। দুই
পাশেই সরিষার ক্ষেত হলুদে হলুদে মাখামখি অবস্থা। এইরকম অনেক দিন
পর দেখলাম। ক্ষেতের মাঝে মাঝে বাবলা গাছ। রাস্তার দুই
পাশে মেহগনি গাছ। বুনোলতা গাছগুলি বেয়ে উপরে
উঠে গেছে। মাঝে মধ্যে ল্যান্টানা ঝোপ চোখে পড়ছে। দূরে
কিছু বাড়ি। ঘরগুলোর কাছাকাছি কলাগাছ। একটা বাড়ির পাশে বাঁশ ঝাড়ও আছে দেখলাম। পাশে ছোট
একটুকরো জমিতে একটা গরু বাধা। সাদা ফকফকা একটা বাছুর গরুটার আশেপাশে
লাফিয়ে বেড়াচ্ছে। মহাসড়ক থেকে একটা কাঁচাপাকা রাস্তা বেরিয়ে গ্রামের ভিতর দিকে
চলে গেছে। রাস্তাটা কিছুদূর গিয়েই
একটা ব্রীজ। ব্রীজের কিনারে পা ঝুলিয়ে একটি ছেলে বড়শি ফেলে ফাৎনার দিকে তাকিয়ে
আছে।
No comments:
Post a Comment